তুমি, একটা প্রাচীন শব্দ
এক প্রয়োজন,
পাথরে পাথর ঘষাতে হওয়া এক
পুরাতন বিশ্বাস।
তুমি, এক অহৈতুকী ভয়
এক সাবধানতা,
নৈষ্ঠিকতায় কোলে নেওয়া
এক পরম্পরা ।
মনে পড়ে না !
ঠিক কখন চিনতে পেরেছিলাম তোমাকে।
ঠাকুরমার উঠোনে জমে উঠা
শীত পোড়ানো আড্ডায়
না বাতির শিখায় আকৃষ্ট হয়ে,
অবুঝ বয়সে
পোড়াতে আমার হাত
আজও ভুলে যেতে পারিনি
আগুনে পোড়া আলুর লালচে ধরা স্বাদ !
ছোটকালে একবার একটা ঘর
পোড়া দেখেছিলাম!
একরাশ ছাই উরে এসে কাছের বাড়িগুলোর
উঠোনে ছড়িয়ে পড়েছিল
মানুষের মৃত্যুতে যে মেয়ে
কাঁদতে জানে না
তার মা নাকি যৌতুক না আনার রোষে
আত্মহত্যা করেছিল
জীবিতজনের অংগার কালো রূপ দেখে
পেটে হাত-পা লুকিয়েছিলাম
তখন ভাবতেই পারিনি
এই আগুনই যে এত সুন্দর করে পোড়াতে পারে!
জ্বালিয়ে জ্বালিয়ে
এইভাবে উজ্জ্বল করাতে পারে !
মাত্র জেনেছিলাম, সুর্য জ্বলে বলেই
পৃথিবীবাসীরা প্রাণ পায়,
গাছ-লতিকাদের আহার জন্মায়।
তখন বুঝতেই পারিনি!
রাত জ্বলে জ্বলেই যে দিন হয়,
দিন জ্বলে জ্বলেই যে রাত হয় ।
সময় জ্বলে বলেই আমরা গড়ন নিচ্ছি,
আমরা লয় পাচ্ছি
আলো জ্বলে বলেই আমরা কর্মমুখী
আঁধার জ্বলে বলেই
ভুলে যেতে পারি সমস্ত দু:খ-আলস্য।
যৌবন জ্বলে বলেই মোহময় এই জীবন
পৌঢ়ত্ব জ্বলে বলেই
উপচে পরে অভিজ্ঞতার সোপান
বৃদ্ধত্ব জ্বলে বলেই মেলে রাখা একটা বইয়ের
শেষ পৃষ্ঠাতে পৌঁছাবে একদিন তুমি।
হে সৃষ্টিকর্তা, আমাকেও
এই আগুনের অংশীদার হতে দাও!
জ্বলে জ্বলে
ছাই হয়ে মিলিয়ে যেতে দাও !
এই পরিমণ্ডলে আমি যেন হারিয়ে না যাই !
এই পৃথিবীর শেষ পর্যন্ত
বাতাসের কোষে কোষে থেকে যেতে পারি
নতুন পুরুষের জন্যে
সোণালি স্মৃতির সুবাস হয়ে।